No Item in Cart
প্রকৃতির মহৌষধ মধু
প্রকৃতির মহৌষধ মধু
আফতাব চৌধুরী
বিখ্যাত চিকিৎসক ইবনে সিনা তার বিশ্বখ্যাত Medical test book ‘The canon of Medicine’ এ রোগের প্রতিষেধক হিসাবে মধু ব্যবহারের সুপারিশ করেছেন। তিনি মধুর উপকারিতা সম্পর্কে বলেছেন, মধু মানুষকে সুখী করে, পরিপাকে সহায়তা করে, ঠান্ডার উপশম করে, ক্ষুধা বাড়ায়, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি ও তীক্ষ্ণ করে, জিহবা পরিষ্কার ও যৌবন রক্ষা করে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে মধু : দুই চামচ দারুচিনি গুঁড়া ও এক চামচ মধু এক গাস হাল্কা গরম পানির সাথে মিশিয়ে সেবন করলে মূত্রথলির জীবাণু ধ্বংস করে।
দাঁতের ব্যথা : দাঁতে ব্যথা হ’লে এক চামচ দারুচিনি গুঁড়া, পাঁচ চামচ মধু একসাথে মিশিয়ে ব্যথা যুক্ত দাঁতের গোড়ায় ব্যবহার করলে উপশম হয়। ব্যথা না সারা পর্যন্ত দিনে তিনবার করে ব্যবহার করতে হবে।
ক্লোলেস্টেরল : দুই চা চামচ মধু ও তিন চা চামচ দারুচিনি গুঁড়া ১৬ আউন্স পানি মিশিয়ে ক্লোরেস্টেরলের রোগীকে সেবন করালে দুই ঘণ্টার মধ্যে ক্লোলেস্টেরলের পরিমাণ ১০ শতাংশ কমিয়ে আনা যায়। দিনে দু’বার সেবন করলে যে কোন ধরনের ক্লোলেস্টেরলজনিত রোগ উপশম হয়।
ঠান্ডা লাগা : যারা সাধারণত তীব্র ঠান্ডায় ভোগেন তাদের এক টেবিল চামচ হাল্কা গরম মধু ও দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে দিনে একবার করে তিন দিন সেবন করতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় ঠান্ডা, পুরন কাশি উপশম হয় ও সাইনাস পরিষ্কার করে।
পাকস্থলীর সমস্যা : দারুচিনি পাউডারের সাথে মধু মিশিয়ে সেবন করলে পাকস্থলীর ব্যথা ও গ্যাস্ট্রিকজনিত ব্যথা উপশম হয় এবং পাকস্থলীর মূল থেকে আলসার ভাল করে।
হার্টের রোগ : দারুচিনি গুঁড়া ও মধু এক সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে রুটির সাথে জেলির মতো মাখিয়ে সকালের পানি খাবারের সাথে খেতে হবে। এটা ধমনীর ক্লোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় ও রোগীকে হার্ট অ্যাটাক থেকে রক্ষা করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা : প্রতিদিন মধু ও দারুচিনি গুঁড়া সেবন করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের আক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে।
বদহজম : দুই টেবিল চামচ মধুর ওপর সামান্য দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে খাবারের আগে সেবন করলে এসিডিটি কমে যায় ও ভারী খাবার হজম হয়।
ইনফ্লুয়েঞ্জা : মধু ইনফ্লুয়েঞ্জার জীবাণু ধ্বংস করে।
ত্বকের ইনফেকশন : মধু ও দারুচিনি গুঁড়া সমপরিমাণে মিশিয়ে একজিমা, দাঁদ ও অন্য সব ধরনের ত্বকের ইনফেকশনে আক্রান্ত স্থানে লাগাতে হবে। দিনে দু’বার সাত দিন থেকে শুরু করে প্রয়োজনে এক মাস ব্যবহার করতে হবে।
ওযন কমানো : সকালে খাবারের আধ ঘণ্টা আগে খালিপেটে ও রাতে শোবার আগে মধু ও দারুচিনি গুঁড়া এক কাপ গরম পানির সাথে মিশিয়ে পান করতে হবে। নিয়মিত পান করলে স্থুলকায় শরীরের ওযনও কমতে থাকে। এ মিশ্রণ নিয়মিত পানে উচ্চমানের খাবার খেলেও শরীরে চর্বি জমতে পারে না।
ক্যান্সার : সম্প্রতি জাপান ও অস্ট্রেলিয়ায় পাকস্থলী ও হাড়ের ক্যান্সার সফলতার সাথে সারছে। যেসব রোগী এ ধরনের ক্যান্সারে ভোগেন তাদের ক্ষেত্রে এক টেবিল চামচ মধু ও এক চামচ দারুচিনি গুঁড়া একসাথে মিশিয়ে দিনে তিনবার একমাস সেবন করলে আরোগ্য লাভ সম্ভব।
ক্লান্তি : ডা. মিল্টন গবেষণা করেছেন তিনি বলেন, এক গাস পানি অর্ধেক টেবিল চামচ মধু ও কিছু দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে সকালে দাঁত ব্রাশ করার পরও বিকেলে পান করলে সাতদিনের মধ্যে শরীর সতেজ হয়ে ক্লান্তি দূর হয়।
শ্রবণশক্তি কমে গেলে : যেসব রোগী কানে কম শোনে তাদের ক্ষেত্রে সমপরিমাণ মধু ও দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে সকালেও রাতে পান করলে শ্রবণশক্তি বৃদ্ধি পায়।
পুড়ে গেলে : খাঁটি মধু পোড়ার উপর আলতোভাবে নিয়মিত লাগালে পোড়ার জ্বালা বন্ধ করে, ব্যথা দূর করে ও দ্রুত উপমশ হয়।
বিছানায় প্রস্রাব করলে : শিশুদের ঘুমানোর আগে এক চা চামচ মধু খাওয়ালে বিছানায় প্রস্রাব করা বন্ধ হয়।
অনিদ্রা : এক গাস দুধের সাথে এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে পান করলে ভাল ঘুম হয়। ঘুমের পর শরীর সতেজ হয়, কর্মোদ্যম ফিরে পাওয়া যায়।
নাকের নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়া : এক বাটি গরম পানিতে এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে বাটির ওপর মাথা রেখে শ্বাসের মাধ্যমে গন্ধ নিতে হবে ও বাটিসহ মাথা তোয়ালে দিয়ে ঢেকে নিতে হবে। এতে অত্যন্ত ভাল ফল পাওয়া যায়।
ক্ষত : ক্ষতস্থানে মধু দ্বারা প্রলেপ দিয়ে বেঁধে দিলে খুব ভাল উপকার পাওয়া যায় ও নিয়মিত ব্যবহার করলে কোনও এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না।
অস্টিওপোরোসিস : প্রতিদিন এক চা চামচ মধুপান করলে ক্যালসিয়াম ব্যবহারে সহায়ক হয় ও অস্ট্রিওপোরোসিস রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। বিশেষ করে পঞ্চাশোর্ধ বয়সের লোকের জন্য মধু খুব উপকারী।
মাইগ্রেন : হাল্কা গরম পানি এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে মাইগ্রেন ব্যথার শুরুতে চুমুক দিয়ে পান করতে হবে। ২০ মিনিট পরপর পান করতে হবে এতে খুব ভাল ফল পাওয়া যায়।
মোটকথা প্রকৃতির দান মধুর উপকারিতার শেষ নেই। আজকাল অনেকেই নিজ নিজ বাড়িতে মধুর চাষ করতে শুরু করেছেন। এটা ভাল লক্ষণ। কারণ বাজারে আজকাল খাটি ও ভাল মধু পাওয়া কঠিন।
(সংকলিত)
{মাসিক আত-তাহরীক ১৭ তম বর্ষ ৭ম সংখ্যা এপ্রিল ২০১৪ খ্রীষ্টব্দ। }